২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ০৫ অক্টোবর ২০২৫, এই ৭ দিনের সময়কালে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে সোনার দামে বড় উত্থান-পতন লক্ষ্য করা গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার মূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে ‘তেজাবি সোনা’র (পিওর গোল্ড) দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এই সপ্তাহে দুই দফা দাম সমন্বয় করেছে, যার ফলে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। বিনিয়োগকারী এবং ক্রেতাদের জন্য এই সাপ্তাহিক মূল্যের বিস্তারিত বিশ্লেষণ, কারণ এবং পূর্বাভাস তুলে ধরা হলো।
সাপ্তাহিক মূল্যের সংক্ষিপ্ত চিত্র (২৯/০৯/২০২৫ থেকে ০৫/১০/২০২৫)
ক্যারেট (প্রতি গ্রাম) | সর্বনিম্ন মূল্য (৳) (২৯/০৯/২০২৫) | সর্বোচ্চ মূল্য (৳) (০৫/১০/২০২৫) | গড় মূল্য (৳) | পরিবর্তনের প্রবণতা |
২২ ক্যারেট | ১6,544 | ১6,939 | ১6,775 | সামান্য বৃদ্ধি |
২১ ক্যারেট | ১5,792 | ১6,169 | ১5,869 | উত্থান-পতন |
১৮ ক্যারেট | ১3,536 | ১3,859 | ১3,725 | সামান্য বৃদ্ধি |
সনাতন পদ্ধতি | ১১,235 | ১১,510 | ১১,396 | সামান্য বৃদ্ধি |
Export to Sheets
(দ্রষ্টব্য: এই মূল্যের সাথে ৫% ভ্যাট ও ন্যূনতম ৬% মজুরি যুক্ত হবে।)
দিনের হিসেবে দামের বিশদ বিশ্লেষণ (প্রতি গ্রাম, টাকা)
এই সপ্তাহে সোনার দাম দুটি প্রধান ভাগে পরিবর্তিত হয়েছে:
তারিখ | ২২ ক্যারেট | ২১ ক্যারেট | ১৮ ক্যারেট | সনাতন পদ্ধতি |
২৯ সেপ্টেম্বর | ১6,544 | ১5,792 | ১3,536 | ১১,235 |
৩০ সেপ্টেম্বর – ০২ অক্টোবর | ১6,751 | ১5,989 | ১3,705 | ১১,379 |
০৩ অক্টোবর | ১6,751 | ১5,989 | ১3,705 | ১১,379 |
০৪ অক্টোবর | ১6,939 | ১5,169 | ১3,859 | ১১,510 |
০৫ অক্টোবর (সর্বশেষ) | ১6,939 | ১6,169 | ১3,859 | ১১,510 |
Export to Sheets
মূল পরিবর্তন:
- ৩০ সেপ্টেম্বর: ২৯ সেপ্টেম্বরের তুলনায় দাম বাড়ানো হয়। ২২ ক্যারেটের দাম ৳16,544 থেকে বেড়ে ৳16,751 হয়।
- ০৪ অক্টোবর: এই দিনে ২১ ক্যারেটের দামে বড় পতন দেখা যায়, যা ৳15,989 থেকে কমে ৳15,169 হয়। তবে ০৫ অক্টোবর আবার ৳16,169 এ বৃদ্ধি পায়। ২২ ক্যারেটের দাম ৳16,751 থেকে বেড়ে ৳16,939 হয়, যা প্রতি ভরি ১,৯৭,৫৭৬ টাকা (সর্বোচ্চ রেকর্ড) নির্ধারণ করে।
এই উত্থান-পতনের কারণ কী?
সোনার দামের এই ঘন ঘন উত্থান-পতনের পেছনে প্রধানত আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জড়িত:
- আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি: স্থানীয় বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর মূল কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে তেজাবি সোনা (পিওর গোল্ড)-এর মূল্য বৃদ্ধি। বিশ্ববাজারে সোনা এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হচ্ছে।
- ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা: বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, যেমন যুদ্ধ বা সংঘাতের আশঙ্কা, বাড়লে বিনিয়োগকারীরা ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’ হিসেবে সোনার দিকে ঝোঁকেন। এই কারণে সোনার চাহিদা বাড়ে ও দাম বাড়ে।
- মার্কিন ডলারের অস্থিরতা: যখন মার্কিন ডলার দুর্বল হয় বা এর মূল্য কমে যায়, তখন সোনার দাম বাড়ে। বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ ডলার থেকে সরিয়ে সোনায় বিনিয়োগ করেন। আবার ডলার শক্তিশালী হলে সোনার দাম কমে।
- মুদ্রাস্ফীতি (Inflation): মূল্যস্ফীতির হার বাড়লে অর্থের মান কমে যায়। তখন বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি সুরক্ষিত রাখতে সোনা কিনে মজুত করেন, যা দামকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
- আমদানি ও সরবরাহ: বাংলাদেশে সোনার খনি না থাকায় এবং আমদানির ওপর নির্ভরতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়াতে হয়। পাচার রোধেও এই সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ।
বিনিয়োগকারী ও ক্রেতাদের জন্য পরামর্শ
- বিনিয়োগকারী: যেহেতু সোনার দাম বর্তমানে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অস্থিরতার কারণে আরও বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাই দীর্ঘমেয়াদি (Long-Term) ও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনা এখনও আকর্ষণীয়। তবে দামের সাম্প্রতিক উত্থান-পতন বিবেচনা করে স্বল্পমেয়াদে (Short-Term) লেনদেনে সতর্ক থাকতে হবে।
- ক্রেতা (গয়না): উৎসবের মৌসুম বা বিয়ের মতো অনুষ্ঠানের জন্য গয়না কেনার ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা একটি উদ্বেগের কারণ। সোনার বর্তমান সর্বোচ্চ দাম এবং ভ্যাট-মজুরি যোগ হওয়ার পর চূড়ান্ত মূল্য আরও বেশি হওয়ায়, ক্রেতাদেরকে কেনার পরিকল্পনায় বিশেষভাবে সচেতন হওয়া উচিত।
সম্ভাব্য পূর্বাভাস (অক্টোবর ২০২৫)
আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান অনিশ্চয়তা বিবেচনা করে, আগামী দিনগুলোতে সোনার দামের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বা বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়ে, তবে ২২ ক্যারেটের সোনার ভরি ২ লাখ টাকার ঘরও ছুঁতে পারে।