মক্কা, সৌদি আরব — সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কার কাছে সম্প্রতি বিশাল এক স্বর্ণের খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। দেশের রাষ্ট্রীয় খনিজ কোম্পানি ‘মাদিন’ (Ma’aden) এই ঘোষণা দিয়েছে। এই আবিষ্কারকে সৌদি আরবের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা প্রায় ১২৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
আবিষ্কারের বিস্তারিত তথ্য
মানসুরা-মাসারা স্বর্ণখনির দক্ষিণাঞ্চলে সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে উচ্চমাত্রার সোনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি টন মাটিতে সর্বোচ্চ ২০.৬ গ্রাম পর্যন্ত সোনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সোনার এই ঘনত্ব অত্যন্ত সমৃদ্ধ বা উচ্চ-গ্রেডের বলে বিবেচিত।
মাদিনের প্রধান নির্বাহী রবার্ট উইল বলেন, “এই আবিষ্কার মক্কাকে বৈশ্বিক স্বর্ণমানচিত্রে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি কেবল অর্থনৈতিক সাফল্য নয়, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেও একটি ঐতিহাসিক অগ্রগতি।”
বর্তমানে মানসুরা-মাসারা খনিতেই আনুমানিক ৭০ লাখ আউন্স সোনা মজুদ রয়েছে এবং প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ আউন্স সোনা উত্তোলন করা হয়। নতুন এই বিশাল খনি যুক্ত হওয়ায় দেশের সামগ্রিক সোনা উৎপাদন ক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আবিষ্কারের ফলে পুরো অঞ্চলজুড়ে একটি “গ্লোবাল গোল্ড বেল্ট” বা আন্তর্জাতিক মানের স্বর্ণপট্টি গড়ে উঠতে পারে।
অর্থনৈতিক প্রভাব ও ভিশন ২০৩০
এই আবিষ্কার সৌদি আরবের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের প্রধান উদ্যোগ ‘ভিশন ২০৩০’-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই ভিশনের মূল লক্ষ্য হলো তেলের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে খনিজ, প্রযুক্তি ও শিল্প খাতকে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা।
সৌদি শিল্প ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী বান্দার আল-খোরাইফ মন্তব্য করেন যে, তাদের খনিজ খাত এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি এই সোনার খনি আবিষ্কারকে সৌদি অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণের পথে একটি ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ধর্মীয় বিতর্ক: কেয়ামতের আলামত?
অর্থনৈতিক আশার পাশাপাশি, ধর্মীয় মহলে এই আবিষ্কার নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। অনেক ইসলামি গবেষক মক্কার এই স্বর্ণখনিকে হাদিসে বর্ণিত কেয়ামতের আলামতের সঙ্গে তুলনা করছেন।
- হাদিসের বর্ণনা: মিশকাতুল মাসাবিহী গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, ফোরাত (ইউফ্রেটিস) নদীর পানি শুকিয়ে গেলে এর তলদেশ থেকে স্বর্ণের একটি খনি বা পাহাড় বেরিয়ে আসবে—যা কেয়ামতের একটি নিদর্শন।
তবে এই প্রসঙ্গে অনেক আলেম যুক্তি দেন যে, সৌদি আরবের বর্তমান বা সদ্য আবিষ্কৃত কোনো স্বর্ণখনিই ফোরাত নদীর কাছাকাছি নয়। ফলে এই আবিষ্কারকে সরাসরি সেই ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে সম্পর্কিত বলা সঠিক নয়। অন্যদিকে, কিছু গবেষক মনে করছেন, পৃথিবীতে দ্রুত ঘটতে থাকা ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন হয়তো ভবিষ্যতে এই হাদিসের তাৎপর্যকে নতুনভাবে প্রমাণ করতে পারে।
অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং ধর্মীয় আলোচনার সংমিশ্রণে সৌদি আরবের এই নতুন স্বর্ণখনি এখন বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।